সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে কলমাকান্দায় রসুর (লইচ্ছা) সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়কের নিচের মাটি সরে গেছে, ওপরে ঝুলে আছে ঢালাই। ফলে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে সেতুটি। এছাড়া ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারী। তাই সেতুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে। এ কারণে বর্ষা এলে এই সেতুসহ তীরবর্তী বসতবাড়ি ঝুঁকিতে পড়ে।
জানা যায়, উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের নল্লাপাড়া নামক স্থানে রসুর (লইচ্ছা) সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পথচারীসহ যাত্রীবাহী গাড়িসহ পিকআপ, অটো-ইজিবাইক, লরিসহ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করছে। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এদিকে প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়কের নিচের অংশে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতি ইউনিয়নের নল্লাপাড়া নামক স্থানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০০০ সালে রসুর সেতু নির্মিত হয়েছিল। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়কের নিচের অংশে মাটি সরে গেছে। ছোট-বড় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দীর্ঘদিনেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি। যানবাহনের চাপে সেতুটি মূল সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কায় এলাকাবাসী। এ সড়ক দিয়ে রংছাতি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার ২৫/৩০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। কয়েকটি যাত্রীবাহী ডে-নাইটকোচও চলাচল করে।
এ সময় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, পাহাড়ি ঢলের পানির তীব্র স্রোত ছাড়াও প্রতিনিয়ত অবৈধ বালুবোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকার ঢেউয়ে সেতুসহ মহাদেও নদ তীরবর্তী বসতভিটার মাটি ধসে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভাঙন রোধে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালুভর্তি বস্তা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।
সেতু সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা ছাদু মিয়া, হোসেন আলীসহ জ্যোৎস্না বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তীব্র স্রোতে এবং বালুবোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকার ঢেউয়ে আমাদের বসতবাড়িসহ সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক মহাদেও নদে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি বালুমহাল বিলুপ্ত করে ইজারা বাতিল হওয়ার সত্ত্বেও অবৈধভাবে প্রতিদিন দিনে-রাতে বালুখেকোরা বসতভিটার সামনে জায়গাসহ মহাদেও নদ থেকে জোরপূর্বক শতাধিক ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যায়। এর দ্রুত প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে রসুর (লইচ্ছা) সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়কের নিচের অংশ মাটি ধসে অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সংকেত দেয়া হবে। সংস্কারের একটি প্রস্তাবনাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা.) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রসুর সেতুটি সংযোগ সড়ক অতিদ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অর্থদণ্ড ও বালু জব্দসহ একটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়। প্রকাশ্যে নিলাম ডাকে জব্দ বালু বিক্রি করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।