এসএম শামীম: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সিধলী বাজারে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিধলী বাজারে শরীফ ডাক্তারের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
টাকার দাবিতে একাধিকবার চাপ
ভুক্তভোগী ওয়াসিমের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সাইফুল নামের এক ব্যক্তি একাধিকবার ফোন করে টাকা দাবি করে আসছিল। গত সপ্তাহে সাইফুল ও শরীফ বাজারে এসে ৫ হাজার টাকা চায় এবং এরপর রবিবার রাতে আবারও তার বাড়ির সামনে এসে টাকা দাবি করে।
ওয়াসিম জানান, ঢাকা থেকে তার বাড়ির জন্য ইট পাঠানো হয়েছিল, সেই টাকার লেনদেন করতেই তিনি বাজারে যান। বাজারে শাহ আলমের দোকানে গিয়ে শরীফকে ৫ হাজার টাকা দিলে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আরও ২ হাজার টাকা দেন।
হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ
লেনদেন শেষে ওয়াসিম চলে আসার সময় হঠাৎ সাইফুল তার পকেটে হাত দিয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর আকাশের দোকানের সামনে ওয়াসিমের ওপর আবারও হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনায় সাইফুল, শরীফ, জাকারিয়া এবং আরও ১০-১২ জন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী।
জুয়ার আসর ও পুরনো শত্রুতা
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসিম, সাইফুল ও শরীফ একই এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা জুয়ার আসর পরিচালনা করতো। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসিম জুয়ায় উচ্চ সুদে টাকা বিনিয়োগ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওয়াসিমের টাকার ওপর নজর পড়ে বাকিদের।
অভিযুক্তদের বক্তব্য
অভিযুক্ত সাইফুল হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এক ছোট ভাই ওয়াসিমের কাছে টাকা পেতো, সে টাকা চাইতে গেলে বাকবিতণ্ডা হয়, পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। কিন্তু ছিনতাইয়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
অন্যদিকে, শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ওয়াসিমের কাছে ৫ হাজার টাকা পেতাম, সেই টাকাই চেয়েছি। যেহেতু টাকার সে মুনাফা দিবে, এজন্য দীর্ঘদিন হওয়ায় তার কাছে বেশ কিছু মুনাফাও জমা হয়। এছাড়া তার সাথে ঘটনাক্রমে হাতাহাতি হয়েছে। কিন্তু তার টাকা ছিনতাই করিনি।”
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিক্রিয়া
সিধলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) আশরাফুল ইসলাম জানান, “ঘটনার সঙ্গে জুয়া সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। ছিনতাই হয়েছে কি না, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন বলেন, “ওয়াসিম আমাকে সঙ্গে নিয়ে টাকা দিতে এসেছিল। তার হাতে কিছু টাকা আমরা দেখেছি। তবে মারামারির সময় আমি সেখানে ছিলাম না, এবং তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে কি না, তা আমি জানি না।”
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় পুলিশ তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।